পরিবেশসম্মত নয়, হাওরের সেই আলপনা , পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন
মোঃ বোরহান উদ্দিন
স্টাফ রিপোর্টার,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা টিভি।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায় বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে।
১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে মিশে হাওরের জলজ বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মত দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এমন অবস্থায় পরিবেশসম্মত প্রক্রিয়ায় এই রং অপসারণের সুপারিশ করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ, আলপনা অঙ্কনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, রাস্তাটি যে সংস্থার অধীনে সেই সড়ক ও জনপথ (সওজ) , স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়েই বৈশাখের এই আলপনা করেছে বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠান।
গত রোববার পরিবেশ অধিদপ্তর, কিশোরগঞ্জ সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়,
রাস্তাটি হাওরের মাঝখান দিয়ে চলমান থাকায় আলপনার এসব রঙের চূড়ান্ত নির্গমনস্থল হাওরের পানি। রোদের তাপে, বৃষ্টি ও যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে জমাট বাঁধা শুকনো রঙের আস্তরণ
ভেঙে ছোট ছোট কণা বা ফাইন ডাস্ট অবস্থায় হাওরের জমিতে পতিত হবে এবং মাটির সঙ্গে মিশে যাবে, যা পরবর্তী সময়ে পূর্ণ বর্ষায় হাওরের পানিতে মিশ্রিত হবে। হাওরের পানি বাতাসের গতির সঙ্গে প্রবহমান থাকে বলে রঙের ক্ষুদ্র কণা পানির সঙ্গে অনবরত অদ্রবণীয় অবস্থায় মিশে পানির স্বচ্ছতা নষ্ট করবে।
এতে পানির গভীরে সূর্যের আলো পৌঁছাতে না পারায় জলজ বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। হাওরের সুরক্ষায় যে কোনো পরিবেশসম্মত প্রক্রিয়ায় সড়কে অঙ্কিত আলপনার রং দ্রুত অপসারণ করতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খানম কালবেলাকে বলেন, তার কাছে এখনো প্রতিবেদনটি পৌঁছেনি।
হাওরের সড়কে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা অঙ্কনের কাজটি বাস্তবায়ন করে বার্জার পেইন্টস, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন ও এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েন্সিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড।
গত ১২ এপ্রিল আলপনা অঙ্কনের কাজটি উদ্বোধন করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির কালবেলাকে বলেন, প্রতিবেদনে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, তার সঙ্গে একমত। রাস্তার রঙের শেষ গন্তব্য হাওরের পানি। সুতরাং রঙের যে রাসায়নিক, তা অবশ্যই হাওরের বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতিকর।
আসছে মৎস্য প্রজনন মৌসুমে মা মাছের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। রং অপসারণের যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা গেলে সাধুবাদ জানাব।
ছবি সংগ্রহীত